ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বগুড়ায় সোমবার (২৪ অক্টোবর) দিনভর বৃষ্টি ও দমকা বাতাস ছিল। ফসলি জমির ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। কোথাও ধানক্ষেতে সব ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। আবার কোথাও কলা বাগানে গাছ ভেঙে পড়েছে।
ফুলকপি, বেগুন ও মরিচের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় আগাম জাতের আলুর জমিতে পানি আটকে পচন রোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সরেজমিনে বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকের ক্ষতির এই চিত্র দেখা যায়। সদর উপজেলার গোপালবাড়ি গ্রামের কৃষক আইনুল ইসলামের আট শতক জমির ধান একেবারেই নেতিয়ে পড়ে। সকাল থেকে সেই জমির ধান কেটে নিতে দেখা যায় তাকে। আইনুল বলেন, ‘নুয়ে পড়া ধানের কুনু ফলন হবিনে, তাই কাটে লিয়ে যাচ্চি, গরুক খাওয়ানির জন্নি। ‘
পার্শ্ববর্তী কালিবালা গ্রামের কৃষক রেজাউল শেখের ২০ শতক জমির অধিকাংশ ধানই নুয়ে পড়েছে। তিনি সকাল থেকে সেসব ধানগাছ এক গোছার সঙ্গ অন্য গোছা বেঁধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন। গোপালবাড়ি গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলামের ১৬ শতক পটোলের মাচা ভেঙে পড়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, খুব বড় ক্ষতি হয়ে গেল। এই জমির পটোলগাছ আবার মাচায় তুলতে গেলে অন্তত ১০ হাজার টাকা খরচ হবে।
শিবগঞ্জ উপজেলার মেদনীপাড়ার কৃষক মাহফুজা রহমান জানান, তিনিসহ ওই এলাকায় যারাই আগাম জাতের ফুলকপির চাষ করেছেন, সোমবার দিনভর বৃষ্টি ও বাতাসে সেসব জমির চারা নেতিয়ে পড়েছে। ফলে ওইসব জমির ফলন আর আশানুরূপ হবে না।
একই উপজেলার চক ভোলাখা গ্রামের আরেফিন হক আফতাবের ১২ শতক জমির ধান, বন্তেঘরি গ্রামের বজলুর রহমানের ২৪ শতক জমির ধান, রাঙামাটি গ্রামের জামাল হোসেনের চার বিঘা, সাইফুল ইসলামের এক বিঘা জমির ফুলকপির চারা নেতিয়ে পড়েছে। অর্জুনপুর গ্রামের রাজু মিয়ার এক বিঘা জমির কলা বাগানের সব গাছ ভেঙে পড়েছে।
জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও একইভাবে বেগুন, মরিচ ও আলুক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকরা জানান।
অন্যদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দাবি করছে, বগুড়ায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে তেমন ক্ষতি হয়নি। এই বিভাগের উপপরিচালক দুলাল হোসেন জানান, সোমবার বৃষ্টির কারণে ধানের বরং উপকার হবে। কিছু এলাকায় ধানগাছ নেতিয়ে গেলেও সেসব জমির ফলনে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। নিচু জমিতে যেসব ফসল আছে সেখানে পানি আটকে থাকলে কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জানান, চলতি মৌসুমে বগুড়ায় এক লাখ ৮৩ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এ ছাড়া চার হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছিল, ইতোমধ্যে সেসব জমির ২০০ হেক্টর থেকে ফসল তোলা হয়েছে। শীতকালীন সবজির জন্য ১৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত তার মধ্যে পাঁচ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে ফসল লাগানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নদী বন্দর/এসএইচ