কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘কৃষিতে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। বিশেষ করে সেচ ব্যবস্থাপনায়। কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই এ অবস্থায় খাদ্যে উদ্বৃত্ত থাকতে হলে চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।’
রোববার (১৭ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর সেচ ভবনে টেকসই সেচ উন্নয়ন ও ভূগর্ভস্থ পানি নজরদারীকরণ (মনিটরিং) অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের নদীতে আগের তুলনায় পানি কম থাকে। কারণ, বিভিন্ন নদীর উজান থেকে ভারত পানি তুলে নেয়। তাই খাল খনন প্রকল্প থেকে সেচযোগ্য ও সুবিধামতো পানি পাওয়া যাচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় বাড়াতে হবে। ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে এবং নদী খনন যেভাবে হচ্ছে তাতে আগামীতে তা অবশ্যই বাড়বে।
কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিতে ধান থেকে শুরু করে শাকসবজি, মাছ-মাংসের উৎপাদন বেড়েছে। কারণ, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। সরকারের নেয়া প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কৃষির গুরুত্বকে মাথায় রাখা হয়। দেশে সবুজ বিল্পব হয়েছে। উন্নতজাত, সেচ আর কীটনাশক ও স্বাস্থ্যবান্ধব সারের ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
সেমিনারে রাজনীতি ও ভোট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, পৌর নির্বাচনের ভোট সুন্দর হয়েছে, বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিয়েছে। তারা নিজেরা নিজের ক্ষতি করেছে। অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে করা পদ্মা সেতু বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি অনেক ওপরে নিয়ে গেছে।
সেমিনারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, টেকসই কৃষির অন্যতম অনুষঙ্গ পানি। এক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। উৎপাদনব্যবস্থা স্বাভাবিক ও সাশ্রয়ী রাখতে স্বল্পমূল্যে কৃষকের কাছে পানি পৌঁছে দেয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার এই বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
সরকারের দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই করোনাকালেও কৃষির উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা স্বাভাবিক সময়ের মতোই ছিল উল্লেখ করে সচিব বলেন, সংকটের আশঙ্কা থাকার পরও দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।
এ সময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাফর উল্লাহ জানান, গত ১০ বছরে সেচ কাজে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বেড়েছে ৭.১৮ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১০ সালে সেচ কাজে ব্যবহৃত পানির মাত্র ২০ ভাগ আসত নদী, খাল-বিল, জলাশয় ও বৃষ্টি-বর্ষার পানি থেকে আর ২০২০ সালে এই পানির ব্যবহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭.১৮ শতাংশে। একই সময়ে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ৮০ শতাংশ থেকে ৭২.৮২ শতাংশে নেমে এসেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে গত বছর পর্যন্ত সেচযোগ্য জমির পরিমাণ বেড়েছে ১১ গুণ। অর্থাৎ ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে যেখানে সেচযোগ্য জমির পরিমাণ মোটে ৫ লাখ হেক্টর, গত অর্থবছরে এই জমির পরিমাণ হয়েছে ৫৬ লাখ হেক্টর। শতাংশের হিসাবে এ সময়কালে সেচযোগ্য জমির পরিমাণ বেড়েছে ১ হাজার ২০ শতাংশ। একই সময়ে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। অর্থাৎ ৯৯ লাখ টন থেকে বর্তমানে হয়েছে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন। শতাংশের হিসাবে বেড়েছে ২৯০ শতাংশ।
সেমিনারে আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল মজিদ বলেন, বর্তমানে সেচযোগ্য জমির পরিমাণ ৭৬ লাখ হেক্টর হলেও পানির প্রাপ্যতা স্বল্পতার কারণে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে ৫৬ লাখ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ চাষের সুযোগ থাকলেও প্রায় এক তৃতীয়াংশ জমি সেচের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আবার পানির প্রাপ্তির সুযোগও কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় উন্নত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সংকট দূর করে সেচের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
নদী বন্দর / এমকে