ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মধুমতি নদীতে বাঁশ ও জাল দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে মাছের চলাচলে বাধা ও নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে। মাছ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন গরিব জেলেরা।
কয়েক মাস ধরে এভাবে মাছ শিকার করা হলেও প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রবাহমান কোনো জলাশয়ে কোনো ধরনের বাঁধ, স্থায়ী অবকাঠামো বা অন্য কোনোভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। জলাশয়ে পানির প্রবাহ ও মাছের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে। বাঁধ দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, মধুমতি নদীতে এখন পানি তুলনামূলক অনেক কম। আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের রুদ্রবানা গ্রামের চায়না মিল সংলগ্ন এলাকায় মধুমতি নদীতে বাঁশ ও জাল দিয়ে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ মিটার। নদীর এ পাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত বাঁশের বাঁধের মাঝ দিয়ে পাতা হয়েছে কারেন্ট জাল। এরই একটি নির্দিষ্ট দূরুত্বে জাল দিয়ে বিশেষ ধরনের ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। এসব ফাঁদে মাছ এসে আটকে যায়। প্রতিদিন তিন থেকে চারবার মাছ আহরণ করা হচ্ছে এ বাঁধ থেকে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পার্শ্ববর্তী মহম্মদপুর উপজেলার বাসিন্দা মিটুল মোল্লার নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন মিলে এ বাঁধটি দিয়েছেন। বাঁধটি দিতে প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রধানত ইলিশ মাছ শিকার করার জন্য এ ধরনের বাঁধ দেওয়া হয়। বাঁধ দেওয়ার পর আর খুব একটা খরচ ও কষ্ট করতে হয় না। নৌকা নিয়ে বসে থেকেই মাছ পাওয়া যায়।
তারা জানান, পাঙ্গাস থেকে শুরু করে বেলে মাছ, খসল্লা মাছ, পাবদা মাছ, আইড় মাছ, রিটা মাছও পাওয়া যায়। মূল ফাঁদে একবার আটকে গেলে মাছ আর বের হতে পারে না। এভাবে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দেওয়ার কারণে অন্যান্য জেলেরা স্বাভাবিকভাবে মাছ ধরতে পারে না। এতে অবৈধভাবে বাঁধ দেওয়া ব্যক্তিরা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও গরিব জেলেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বাঁধটির মালিক মিটুল মোল্লা বলেন, কয়েক মাস আগে বাঁধটি দেওয়া হয়েছে। এখন নদী ও বালুর চাপে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহম্মদপুর এলাকার প্রায় বারো জন মিলে বাঁধটি দিতে খরচ হয়েছে প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকা। এভাবে বাঁধ দেওয়া আসলে ঠিক না বলেও স্বীকার করেন তিনি।
প্রশাসনের অনুমতিও নেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নদীতে এখন তেমন মাছ নেই। তবে বেলে মাছ বেশি ধরা পড়ছে।
এ ব্যাপারে বানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদের বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে বার বার কল করেও পাওয়া যায়নি। তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।
তবে বোয়ালমারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অঃদাঃ) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আলফাডাঙ্গা উপজেলায় আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছি। মধুমতি নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে আগামীকালের মধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক বলেন, নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করা অপরাধ। এরইমধ্যে বাঁধটি আমাদের নজরে এসেছে। দুদিন আগেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে তাদের বাঁধটি তুলে নিতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাঁধটি বেশ বড়। এটি অপসারণ করতেও একটু সময় লাগে। তারপরও লোকবল বেশি নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধটি অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নদী বন্দর/এসএন