চিত্রনায়ক শরিফুল ইসলাম রাজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি এবং সুনেরাহ বিনতে কামালের কয়েকটি আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফাঁস হয়। তানজিন তিশা জানিয়েছেন, ঘটনার প্রায় দুদিন পর ভিডিও ফাঁসের বিষয়টি তার নজরে এসেছে।
আপত্তিকর ভিডিও ফাঁসে ক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রে থেকে আইনিব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
বুধবার রাত সোয়া ১০টায় ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে এ হুঁশিয়ারি দিয়ে তিশা লিখেছেন, ‘দুটি শোতে অ্যাটেন্ড করার কারণে বেশ কিছু দিন ধরে আমি আমেরিকায় আছি। বাংলাদেশে যখন সকাল তখন এখানে গভীর রাত। এ জন্য বাংলাদেশের খবরাখবর খুব বেশি জানি না আমি। আমাকে জড়িয়ে যে ঘটনাটা ঘটে গেছে, সেটি পরে আমি দেখেছি, জানতে পেরেছি।’
তিশা আরও লিখেছেন ‘প্রথমত, বিষয়টি দুঃখজনক। এটি নিয়ে আমি বলতে চাই, স্যোশাল মিডিয়ায় আমার যে ভিডিও আপ করা হয়েছে, সেটি আমার একান্তই ব্যক্তিগত ভিডিও। ৬-৭ বছর আগে আমরা বন্ধুরা ফান করে ভিডিওটি করেছিলাম। যেহেতু এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ভিডিও, তাই এটার এক্সপ্লেনেশন দেওয়ার কিছু আছে বলে মনে করি না। প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব জীবন আছে, পার্সোনালিটি আছে, ব্যক্তিগত ব্যাপার আছে, যেটাকে জাজ করার অধিকার অন্য কাউকে আমি দিতেও চাই না। তাই আমার দর্শক ও অনুরাগীদের উদ্দেশ্যে এতটুকুই বলব ৬-৭ বছর আগের সামান্য একটা ক্লিপ দিয়ে ব্যক্তি তানজিন তিশাকে জাজ করে ফেলবেন না, প্লিজ।’
‘আপনাদের ভালোবাসা আর দোয়ায় আমি আজ এ পর্যন্ত এসেছি। আমার অভিনয় আর ব্যক্তিগত জীবনকে আলাদা রাখবেন, আমি আমার অভিনয় দিয়েই আপনাদের কাছে বেঁচে থাকতে চাই সবসময়, প্রিয় হয়ে থাকতে চাই। যদিও আমি বলেছি, আমার এ ঘটনা নিয়ে কাউকে এক্সপ্লেনেশন দিতে চাই না। তবে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী আর দর্শকদের যদি এ ঘটনা বিব্রত করে, কষ্ট দেয়, আমি মন থেকেই দুঃখ প্রকাশ করছি।’
‘দ্বিতীয়ত এই ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন চ্যানেল, পত্রিকা, অনালাইন নিউজে, ফেসুবকে গ্রুপে, কমেন্টে বলা হচ্ছে/লেখা হচ্ছে ‘শরিফুল রাজের সঙ্গে তিশার আপত্তিকর বা গোপন ভিডিও ফাঁস’। যথাযথ সম্মান নিয়েই আপনাদের বলছি, এ ভিডিওর মধ্যে শরিফুল রাজ কোথা থেকে এলো? কী গোপনীয়তা এখানে? তার ফেসবুক আইডি থেকে এটি প্রকাশ পেয়েছে বলেই কেন ভাবছেন, সেখানে আমি তার সঙ্গে আছি। ভিডিওতে আমি একা এবং সেটা কোনো আপত্তিকর বা গোপন ভিডিও না। বরং সেটা আমার ব্যক্তিগত মুহূর্তের। সুতরাং ‘আপত্তিকর বা গোপন ভিডিও ফাঁস’ শব্দগুলো কারেকশন করা উচিত। এটা বিব্রতকর এবং অসম্মানজনক।’
এ অভিনেত্রী আরও লেখেন, ‘তৃতীয়ত, একজন মানুষের প্রাইভেসি, হেম্পার করা, হ্যারেজমেন্ট করা বা পারসোনাল ভিডিও অনুমতি ছাড়া পাবলিকলি প্রকাশ করা, এটা বিগ ক্রাইম। সো যার আইডি বা যিনি এটি আপ করেছেন বাংলাদেশে ফিরে আমি তার বিরুদ্ধে আইনি উদ্যোগ নিচ্ছি। তবে ইতোমধ্যে অনেকেই ধারণা করতে পারছেন, অনেকের মুখে মুখেও এটি শোনা যাচ্ছে কে বা কারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আমি এখানে কারোর নাম উল্লেখ করতে চাই না, আমি দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি সম্মান রেখে পদক্ষেপ নেব। সেই আইনই বলে দেবে কে বা কারা এই ব্যক্তিগত ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে আমার সম্মান নষ্ট করেছে, কে বা কারা এই ভয়ংকর অপরাধে জড়িত।’
তিনি লেখেন, ‘চতুর্থত, শরিফুল রাজের আইডি থেকে ভিডিওগুলো আপ করা হয়েছে এবং রাজ তার ব্যক্তিগত আইডি থেকে দুঃখ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছে। শুধু দুঃখ প্রকাশেই কেন ঘটনা শেষ করতে চাইছে রাজ? এই যে তোমাকে জড়িয়ে কয়েকটা মেয়ের সম্মান নষ্ট হলো, তাদের ব্যক্তিগত ও ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলল সবাই, পরিবারের সামনে হেয়প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে। এত সিলি সিলি ক্যাপশন দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ ভিডিওগুলোকেও আপত্তিকর বানানো হলো, এ দায়ভার কী তোমার না? কারণ তুমিই তো বলেছো, তোমার আইডি হ্যাক করা হয়েছে। তোমার দায়িত্বশীলতার জায়গায় তুমি কী করছ? কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছ না? কেন এর পেছনের মূল হোতাকে খুঁজে বের করছ না?’
সবশেষ তিশা লেখেন, ‘যদিও দেশে এসেই আমি এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। তবু রাজ আমি তোমার কাছ থেকে এতটুকু দায়িত্বশীল মনোভাব আশা করেছিলাম সত্যি। আসলে তানজিনা তিশা তার কাজ দিয়েই দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে এবং কাজ নিয়েই এই পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে আছে, দর্শকের মনে কাজ নিয়েই থেকে যেতে চায়। তাই দর্শকদের কাছে অনুরোধ, আপনাদের তানজিন তিশাকে কাজের মাধ্যমেই বাঁচিয়ে রাখুন।’
প্রসঙ্গত ২৯ মে দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শরিফুল রাজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েকটি ছবি ও ভিডিও পোস্ট করা হয় ফেসবুকে। সেখানে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, চিত্রনায়িকা নাজিফা তুষি এবং সুনেরাহ বিনতে কামালকে দেখা যায়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মদ্যপ অবস্থায় দেখা যায় তিশাকে। আর সুনেরাহকে অসংলগ্ন ও অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে শোনা গেছে। এ ছাড়া অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায় নাজিফা তুষির দিকে জ্বলন্ত সিগারেট হাতে তাকিয়ে আছেন শরিফুল রাজ।
নদী বন্দর/এসএস