বিচার বিভাগের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত মামলাজটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মেধা, দক্ষতা ও উদ্ভাবনী শক্তি দ্বারা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
একই সঙ্গে তিনি বিচার প্রার্থী সাধারণ মানুষকে দ্রুত ও সহজে ন্যায়বিচার প্রদানের মাধ্যমে জাতিসংঘের এসডিজি ও সরকারের ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার আহ্বান জানান।
রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে একটি ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিচারকদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের অভিযাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ধাপে ধাপে সফলতার সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে। প্রথম ধাপ রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের পথ ধরে এখন তার সরকার এসডিজি ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের পথে দুর্বার গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার দেখানো পথে ২০৪১ সালে আমরা অবশ্যই নতুন আর এক বাংলাদেশ দেখতে পাব, যে বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ-উন্নত বাংলাদেশ; আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী স্মার্ট বাংলাদেশ, যেখানে গড়ে উঠবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ।
আনিসুল হক বলেন, নব্য বিশ্বায়নের এ যুগে শেখ হাসিনার সরকারই জ্ঞান অন্বেষণ, জ্ঞান চর্চা ও জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্র বৃদ্ধির প্রধান মাধ্যম হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ নামক নতুন এক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখানে প্রবেশে কোনো শ্রেণি-ভেদ নেই, নতুন এই বাংলাদেশে প্রতিটি নাগরিকের সমান প্রবেশাধিকার রয়েছে। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধু কন্যা ২০৪১ সালে যে স্মার্ট বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে জ্ঞানই হবে সবচেয়ে বড় শক্তি। যার জ্ঞান থাকবে স্মার্ট বাংলাদেশে সেই সমাজের উঁচু স্তরে পৌঁছে যাবে, তার বংশ পরিচয় সেখানে কোনো কাজে আসবে না।
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যত বেশি দক্ষ হবেন, যিনি যত দ্রুত মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারবেন, স্মার্ট বাংলাদেশে তিনি তত বেশি এগিয়ে যাবেন। সে কারণেই বিচারকদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম উপায় হলো সুষম মানবসম্পদ উন্নয়ন। আর মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হলো প্রশিক্ষণ। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেও দরকার প্রশিক্ষণ।
আইনমন্ত্রী বলেন, একটি উন্নত ও সুদক্ষ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পক্ষেই সুদক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করা সম্ভব। ঠিক সে কারণেই আমরা বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বাড়িয়েছি। আমি দেখেছি, এখানে এক সঙ্গে ৪০ জনের বেশি বিচারককে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেত না। ৪০ জনের একটি ব্যাচের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হলে অন্য বিচারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেত না।
আরও দেখেছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করতে না পারার কারণে অনেক সহকারী জজের চাকরি স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি পেতে বিলম্ব হয়েছে। অনেক প্রয়োজনীতা থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য স্তরের বিচারকদের জন্য নির্ধারিত প্রশিক্ষণ কোর্স যথাসময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি।
এনিয়ে বিচারকদের মনে ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, যা নিয়ে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকেও রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের কল্যাণে এখন সেই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছে। আজ এখানে এক সঙ্গে প্রায় ৮০ জন বিচারককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সাওয়ার ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) শেখ আশফাকুর রহমান বক্তৃতা করেন।
নদী বন্দর/এসএইচবি