করোনাভাইরাসের টিকা প্রদানে অগ্রাধিকার প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে টাঙ্গাইল-৬ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে এই তালিকা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনাসমূহও তুলে ধরেন তিনি।
এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ করোনা যুদ্ধে ফ্রন্ট লাইন যােদ্ধাদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান, আর্থিক প্রণােদনা প্রদান, যথাসময়ে টেস্টিং কিট আমদানি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ল্যাব স্থাপনসহ করোনা পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করায় করোনা বিস্তার রোধে দক্ষিণ এশিয়াসহ অনেক উন্নত দেশের চেয়ে বাংলাদেশ এখন ভালো অবস্থানে আছে।
তিনি বলেন, যথাসময়ে করোনাভাইরাসের টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে সরকার শুরু থেকেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকার ইতোমধ্যে ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট এবং বেক্সিমকো ফামাসিউটিক্যালস এর মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ৩ কোটি বা তার অধিক ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয় করার ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে। এই ভ্যাকসিন চলতি জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহেই বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করা যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ভ্যাকসিন বিষয়ক সম্ভাব্য পরিকল্পনাসমূহ হচ্ছে : বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি হতে বিশ্বের ৯২টি দেশের মতো দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ২০ ভাগ জনগোষ্ঠীর তথা ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজারি গ্রুপ এক্সপার্ট এর নির্দেশনা ও দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদানের অগ্রাধিকার তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভ্যাকসিন বিতরণের প্রথম পর্যায়ে দেশের জনসংখ্যার মোট ১ কোটি ৫০ লাখ (৮.৬৮ %) লোককে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মোট ২ ডোজ করে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। দেশের ৬৪টি জেলা ইপিআই স্টোর এবং ৪৮৩টি উপজেলা ইপিআই স্টোরে এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হবে, চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট হতে প্রাপ্ত ৩ কোটি বা ততোধিক ডোজ ভ্যাকসিন ৬টি ধাপে সরাসরি বাংলাদেশের নির্ধারিত জেলার ইপিআই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতের উপহার হিসেবে ২০ লাখ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ক্রয়কৃত ৫০ লাখ করোনার টিকা গত ২৫ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে ঢাকা পৌঁছেছে। এই ৭০ লাখ টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সিরাম এর সাথে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৬ মাসে সকল টিকার সরবরাহ পাওয়া যাবে। এর বাইরে প্রয়োজন মোতাবেক আরও টিকা ক্রয়ের সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রাপ্তদের অনুযায়ী কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সকল সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ৪ লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন টিকা পাবেন।
এছাড়াও পর্যায়ক্রমে যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে তারা হলেন, কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সকল অনুমোদিত বেসরকারি ও প্রাইভেট ৬ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী, দুই লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্মুখ সারির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬২০ জন সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ জন সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ে কর্মরত ৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী, সম্মুখ সারির গণমাধ্যমকর্মী ৫০ হাজার জন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির কর্মচারী ১ লাখ ৫০ হাজার জন, ৫ লাখ ৪১ হাজার ধর্মীয় প্রতিনিধি। মৃতদেহ সৎকার কাজে নিয়োজিত ৭৫ হাজার ব্যক্তি, ৪ লাখ জরুরি পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবহন কর্মচারী, স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরকর্মী ১ লাখ ৫০ হাজার জন, প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক ১ লাখ ২০ হাজার জন, জেলা ও উপজেলাসমূহে জরুরি জনসেবায় সম্পৃক্ত সরকারি কর্মচারী ৪ লাখ জন, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জনগোষ্ঠী (যক্ষ্মা, এইডস রোগী, ক্যান্সার রোগী) ৬ লাখ ২৫ হাজার জন, ৬৪ থেকে ৭৯ বৎসর বয়স্ক জনগোষ্ঠী ১ কোটি ৩ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৮ জন, ৮০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠী ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ জন, জাতীয় দলের খেলোয়াড় (ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ইত্যাদি) ২১ হাজার ৮৬৩ জন, বাফার, ইমার্জেন্সি, আউটব্রেক ১ লাখ ৭০ হাজার জন।
নদী বন্দর / এমকে