প্রচার সংখ্যায় কারচুপি ও প্রেস নিয়ে অসত্য তথ্য দেওয়ায় তিন দশকের পুরনো সংবাদপত্র দৈনিক ভোরের কাগজের সরকারি মিডিয়া তালিকাভুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে দৈনিক ভোরের কাগজ সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, পরিদপ্তর, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, সরকার নিয়ন্ত্রিত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি এবং জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য স্থানীয় প্রশাসনের বিজ্ঞাপন এবং নিউজপ্রিন্ট কোটা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।
গত ২০ জানুয়ারি একটি নোটিস টানিয়ে ৩৩ বছরের পুরনো এই সংবাদপত্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে জনবলের বড় একটি অংশ ছাঁটাই করে স্বল্প পরিসরে চলতে থাকে পত্রিকাটি।
বেতনভাতা সম্পূর্ণ পরিশোধ না হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে ছাঁটাই হওয়া কর্মীর আন্দোলন করছেন।
পত্রিকাটি বর্তমানে বিশেষ ব্যবস্থায় কয়েকশ কপি ছাপানোর মাধ্যমে সচল রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সরকারি চিঠিতে বলা হয়, গত ২০ জানুয়ারি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ভোরের কাগজ সংবাদপত্রের অফিস এবং প্রেস চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের ৩ সদস্যের একটি পরিদর্শন টিম পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে সংবাদপত্রের প্রধান কার্যালয় বন্ধের নোটিস দেখা যায় এবং অফিস বন্ধ পাওয়া গেছে।
চিঠিতে বলা হয়, “সংশ্লিষ্ট হামরাই প্রিন্টিং প্রেস পরিদর্শন করে দেখা যায়, সংবাদপত্রটি বন্ধ আছে। এরপর সংবাদপত্রটি কোথায় ছাপানো হয় তা ডিএফপিকে জানানো হয়নি।”
এতে আরও বলা হয়েছে, “দীর্ঘ তিন মাস পর সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষ গত ১১ মার্চ পুনরায় হামরাই প্রিন্টিং প্রেসে নতুন করে ছাপা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২১ মার্চ অধিদপ্তরের ২ সদস্যের পরিদর্শন টিম সংবাদপত্রটির প্রিন্টার্স লাইন অনুযায়ী সংবাদপত্রের অফিস কর্ণফুলি মিডিয়া পয়েন্ট (৩য় তলা) ও হামরাই প্রিন্টিং প্রেস, ৬ কুনি পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা সর্বশেষ পরিদর্শন করেন। এ সময় অফিস বন্ধ পাওয়া যায় এবং প্রেসে ছাপা বন্ধ দেখা যায়।
“প্রেস ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, দৈনিক ২০০-৩০০ কপি সংবাদপত্র ছাপা হয়। হাতে হাতে অথবা বিকাশের মাধ্যমে সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষ প্রেস বিল পরিশোধ করেন।”
এসব অনিয়মকে ‘সংবাদপত্র ও সাময়িকীর মিডিয়া তালিকাভুক্তি এবং নিরীক্ষা নীতিমালা, ২০২২’ এর ৫.২৩ এর (খ) অনুচ্ছেদ এবং ‘ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধিকরণ) আইন, ১৯৭৩’ এর ১০ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
“’সংবাদপত্র ও সাময়িকীর মিডিয়া তালিকাভুক্তি এবং নিরীক্ষা নীতিমালা, ২০২২’ মিডিয়া তালিকাভুক্তি বাতিলের শর্তাবলী ৮.০০ এর ৮.৩ অনুযায়ী প্রচার সংখ্যা কারচুপি ও অসত্য তথ্য প্রদান করায় দৈনিক ‘ভোরের কাগজ’ সংবাদপত্রের সরকারি মিডিয়া তালিকাভুক্তি নির্দেশক্রমে বাতিল করা হলো,” বলা হয় চিঠিতে।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তে খেদ প্রকাশ করেছেন দৈনিক ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদক খোন্দকার কাওছার হোসেন।
তিনি বলেন, “ভোরের কাগজের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী গণমাধ্যম সম্পর্কে যেসব তথ্য বেরিয়েছে এবং যে কারণে তালিকাভুক্তি বাতিল করা হয়েছে তা গণমাধ্যমের জন্য লজ্জাজনক।
“পত্রিকাটির নানা অসত্য তথ্য সরকারি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। চাকরিচ্যুত কর্মীদের সব বকেয়া এখনও পরিশোধ করা হয়নি। দীর্ঘ ১৬ বছর এই পত্রিকার পেছনে সময় দিয়ে আমি ভোরের কাগজকে নিজের প্রতিষ্ঠান হিসেবেই মনে করেছিলাম। আজ খুব দুঃখবোধ হচ্ছে।”
নদীবন্দর/ইপিটি