প্রায় ১৫ বছর পর সরাসরি কূটনৈতিক আলোচনায় বসছে— বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠক।
এতে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। তিনি ইতিমধ্যেই ঢাকায় পৌঁছেছেন। বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্বে থাকবেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এফওসি বৈঠকে নির্দিষ্ট কোনো আলোচ্যসূচি না থাকলেও, দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। দীর্ঘদিন পর এমন বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ায় আলোচনা বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হুসেন খান বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, ইসলামাবাদ চায় ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে। বিশেষ করে পাকিস্তান থেকে প্রতিযোগিতামূলক দামে তুলাসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানির আগ্রহ রয়েছে তাদের।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান আফগানিস্তান ও ইরান থেকে পণ্য প্রবেশের একটি গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে। সেক্ষেত্রে পরিবহন ব্যয় কমলে বাংলাদেশের জন্য আমদানির নতুন পথ খুলে যেতে পারে।
হাইকমিশনার জানান, পাকিস্তানের দুটি বেসরকারি এয়ারলাইন— ফ্লাই জিন্নাহ এবং এয়ার সিয়াল বাংলাদেশে সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফ্লাই জিন্নাহ প্রস্তুত রয়েছে এবং এয়ার সিয়াল অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। অনুমোদন পেলে দুই মাসের মধ্যে ফ্লাইট চালু হতে পারে।
তার মতে— এই বিমান যোগাযোগ কেবল বাণিজ্য নয়, মানুষে-মানুষে সংযোগ ও পর্যটন বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
দুই দেশের ইতিহাসভিত্তিক কিছু অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হাইকমিশনার বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও এমন বিষয় থাকে। কিন্তু বর্তমান সহযোগিতা এগিয়ে নিতে এগুলো বাধা হওয়া উচিত নয়।”
আজকের বৈঠকের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া, চলতি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানের উপ–প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। সফরটি বাস্তবায়িত হলে, ২০১২ সালের পর এটিই হবে প্রথম কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর। যদিও এখনো সফরের নির্দিষ্ট তারিখ চূড়ান্ত হয়নি।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ বাংলাদেশ–পাকিস্তান এফওসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১০ সালে। এরপর দীর্ঘ সময় বিরতির পর আজ আবারও দুই দেশ বসছে কূটনৈতিক আলোচনার টেবিলে।
নদীবন্দর/ইপিটি