ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে যাত্রা করা ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’ জোটের একটি জাহাজ আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, মাল্টার উপকূল থেকে ১৪ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ২৫ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করা ওই জাহাজে দুটি ড্রোন হামলা চালানো হয়।
শুক্রবার (২ মে) এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ তথ্য জানিয়েছে বলে জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, গাজার ওপর থেকে ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্যে জাহাজটি সহায়তা নিয়ে যাত্রা করেছিল। বিবৃতিতে বলা হয়—সশস্ত্র ড্রোন দুই বার নিরস্ত্র বেসামরিক জাহাজটির সামনের অংশে হামলা চালায়। এতে আগুন ধরে যায় এবং জাহাজের গায়ে গুরুতর ফাটল দেখা দেয়।
সরাসরি ইসরায়েলকে দায়ী করা না হলেও এতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য—বিশেষ করে অবরোধ ও আন্তর্জাতিক পানিসীমায় বেসামরিক জাহাজে হামলার জন্য।’
ফ্রিডম ফ্লোটিলার প্রতিনিধি নিকোল জেনেস কে জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১২টা ২৩ মিনিটে ‘কনসিয়েন্স’ নামের ওই জাহাজটিতে হামলা হলে ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায় এবং জাহাজে ফুটো হয়ে যায়। এ অবস্থায় জাহাজটিতে থাকা ৩০ জন তুর্কি ও আজেরি মানবাধিকারকর্মী পানির মধ্যে জাহাজটিকে ভাসিয়ে রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। পরে দক্ষিণ সাইপ্রাস থেকে একটি জাহাজ সাহায্যের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। কারণ তারা বিপদের সংকেত পাঠিয়েছিলেন।
এদিকে, মাল্টার সরকার জানিয়েছে, জাহাজে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং তা এখন পর্যবেক্ষণের আওতায় রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছিল কিনা, বা জাহাজে থাকা কর্মীদের অবস্থা কী, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
মাল্টা থেকে জেনেস বলেন, ‘আমরা এখন জাহাজে থাকা লোকজনের অবস্থান জানি না। কারণ, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা রাতে জাহাজের কক্ষে লুকিয়ে ছিল ড্রোনের ভয়ে। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছি।’
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন গত বছর বিভিন্ন দেশের শান্তিকর্মীদের নিয়ে গঠিত হয়। তারা একটি মাছ ধরার পুরোনো ট্রলারকে রূপান্তর করে গাজার অবরোধ ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছে।
দুই মাস আগে ইসরায়েল মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়। এরপর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। এতে গাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
জেনেস বলেন, ‘এই হামলা গাজায় চলমান গণহত্যারই একটি সম্প্রসারণ এবং এর বিচার হওয়া উচিত। আমরা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই এই অবরোধ ও নিপীড়নের দিকে।’
শুক্রবার (২ মে) প্রকাশিত রেড ক্রসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় মানবিক কার্যক্রম এখন ‘সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা ছয় সপ্তাহের সহিংসতা এবং দুই মাসের অবরোধের ফলে সাধারণ মানুষ বেঁচে থাকার মৌলিক উপকরণ থেকেও বঞ্চিত। সহায়তা সরবরাহ অবিলম্বে শুরু না হলে গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের অভাবে মানবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
নদীবন্দর/জেএস