দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থেকে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে কাকরাইল মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান করছেন তারা।
বুধবার (১৪ মে) বিকেল সাড়ে তিনটার সময় এই ঘোষণা দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রদের উপর যে হামলা চালানো হয়েছে, তার বিচার করতে হবে। ঘাতক পুলিশের বিচার করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো। আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে। না মানলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
আরেক শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিচার চাই। এই অপমান আমরা মেনে নেব না। পুলিশের বিচার চাই এবং আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে হবে।’
এসময় জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.রইছ উদ্দীন বলেন, ‘সরকারের এই কর্মকাণ্ডে আমরা মর্মাহত। আমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত। পুলিশের এই কর্মকাণ্ডের বিচার করতে হবে।’
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘জেগেছে রে জেগেছে, জবিয়ান জেগেছে’, ‘আমার ভাই অনাহারে, যমুনা কী করে’, ‘এসেছি যমুনায়, যাবো না খালি হাতে’, ‘আমার ভাই আহত কেন, ইন্টেরিম জবাব চাই’- ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এদিন বিকেল ৩টার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন, ব্যবসায় অনুষদের ডিন মঞ্জুর মোর্শেদ কর্মসূচিতে উপস্থিত হন।
এর আগে বেলা ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লং মার্চ শুরু করে জগন্নাথের শিক্ষক-শিক্ষার্থী। তাতে লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন ।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মৎস ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের ক্রসিং মোড় এলেই পুলিশ অ্যাকশনে যায়। কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড়ে এলেই টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, গরম পানি নিক্ষেপ করতে শুরু করে পুলিশ। এতে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী গুরতর আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.তাজাম্মুল হক বলেন, ‘আমার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমার সহকারী প্রক্টরের উপর পুলিশ আঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচারণ করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত এখন থেকে যাওয়া হবে না।’
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল ইউজিসিতে যান। কিন্তু ইউজিসি থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।
আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।
নদীবন্দর/এএস