দেশের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ফিল্ম ফর চেঞ্জ: একটি জাতীয় চলচ্চিত্র ইনকিউবেশন প্রোগ্রামের প্রদর্শনী’।
রোববার (১০ আগস্ট) ধানমন্ডির ড্যাফোডিল এডুকেশন নেটওয়ার্কের মিলনায়তন ৭১-এ অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়েছে। এতে অংশ নেন দর্শক, শিল্প নেতৃবৃন্দ, একাডেমিক ও উন্নয়ন কর্মীরা।
অক্সফাম বাংলাদেশ ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যৌথ আয়োজনে এ প্রদর্শনী জাতীয় চলচ্চিত্র ইনকিউবেশন প্রোগ্রামের সমাপ্তি অনুষ্ঠান। চলতি বছরের শুরুতে শুরু হওয়া এই প্রোগ্রামে ৩০০-এর বেশি গল্প জমা পড়ে। সেখান থেকে নির্বাচিত ১০ নির্মাতা কয়েক মাস ধরে নির্দেশনা, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও হাতে কলমে কাজের সুযোগ পান।
প্রদর্শনীতে জলবায়ু পরিবর্তন, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, শ্রমিক অধিকার, অর্থনৈতিক ন্যায্যতা ও অসমতা নিয়ে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সারাদিন প্রদর্শিত হয়। আয়োজকদের ভাষায়, এটি শুধু চলচ্চিত্র উৎসব নয়—বরং ধারণা, প্রচার ও কর্মসূচিকে এগিয়ে নেওয়ার একটি প্ল্যাটফর্ম।
আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল, গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ইস্যুতে চলচ্চিত্রের শক্তিকে উদযাপন। উদ্বোধনী অধিবেশনে সামাজিকভাবে প্রভাবশালী চলচ্চিত্র নির্মাণের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়।
ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. লিজা শারমিন বলেন, চলচ্চিত্রের শক্তি হৃদয় ও মন স্পর্শ করার এক অনন্য মাধ্যম। আমরা এমন প্রতিভাদের বিকাশে বিশ্বাসী, যারা শুধু বিনোদন দেয় না, বরং গুরুত্বপূর্ণ গল্প বলতে পারে।
অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে বলেন, যখন তরুণরা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রচার চালায়, তারা এমন এক মাধ্যম ব্যবহার করে যা কেবল নীতিগত প্রতিবেদন দিয়ে সম্ভব নয়।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলেন, সিনেমা সফল হয় যখন তা বাস্তবতার সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত হয়। আজ আমরা যেসব গল্প দেখেছি, সেগুলো খাঁটি, সৎ এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য প্রাসঙ্গিক।
সকালের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন গিয়াসউদ্দিন সেলিম, টনি মাইকেল গোমেজ, রাকা নওশীন নওয়ার, আশীষ দামলে, প্রতিক আকবর, প্রফেসর ড. লিজা শারমিন, ড. গোলাম রহমান ও আফতাব হোসেন।
আলোচনায় উঠে আসে—স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র জনমত গঠন, সমাজের ভুল ধারণা ভাঙা এবং অবহেলিত কণ্ঠকে তুলে ধরতে পারে।
উপস্থিত অতিথিরা আরও আলোচনা করেন তৃণমূলে চলচ্চিত্র আন্দোলন টিকিয়ে রাখা, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা ও সংবেদনশীল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের নৈতিক দিক নিয়ে।
এছাড়াও “গল্প বলা, ভবিষ্যত গড়া: চলচ্চিত্র, উন্নয়ন এবং ডিজিটাল যুগ” শীর্ষক সেশনে অংশ নেন এস.এম. ইমরান হোসেন, সাদাত হোসেন, জাবেদ সুলতান পিয়াস, সায়েদা সাদিয়া মেহজাবিন ও মো. আব্দুল কায়ুম।
আলোচনায় তারা বলেন, ডিজিটাল পরিবেশে সামাজিক ইস্যু তুলে ধরতে আবেগ ও উদ্যোগের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়া জরুরি।
প্রদর্শনীর সমাপ্তি হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। ‘দ্য রিং’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা আতিকুর রহমান চ্যাম্পিয়ন নির্বাচিত হন। ‘বিহিতক’-এর নির্মাতা সম্পূর্ণা গাঙ্গুলী ও ‘মিলি’-র নির্মাতা সুমন মালাকার যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় রানার-আপ হন।
অক্সফামের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদা সুলতানা সমাপনী বক্তব্যে বলেন, আজ আমরা যে গল্পগুলো বলছি, সেগুলোই আগামী দিনের পরিবর্তনের পথ নির্ধারণ করবে। চলুন, সেগুলো বলতেই থাকি জোরে, নির্ভয়ে এবং উদ্দেশ্য নিয়ে।
আয়োজকরা জানান, ‘ফিল্ম ফর চেঞ্জ’ তরুণ প্রতিভাদের জন্য ধারাবাহিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে এবং শিল্প ও সমাজের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে কাজ চালিয়ে যাবে।
নদীবন্দর/ইপিটি