লিটন দাস হাফ সেঞ্চুরি করার পর খুব বেশি এগুতে পারেননি। ৫৯ রান করে আউট হয়ে যান। তিনি আউট হয়ে যেতেই দ্রুততার সাথে শেষ হয়ে গেলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। ১৫৭ রানে অলআউট বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে লিড দাঁড়ালো ২০১ রানের। জয়ের জন্য ২০২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামবে পাকিস্তান।
পাকিস্তানি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির পেস আগুন এবং স্পিনার সাজিদ খানের ঘূর্ণি তোপেই মূলতঃ দ্রুত শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। তবুও, তৃতীয় দিন শেষ বিকেলে ২৫ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর শঙ্কা দেখা দিয়েছিল, ন্যুনতম লড়াই করার মত পুঁজি দাঁড় করাতে পারবে তো বাংলাদেশ!
চতুর্থদিন সকালে শুরুতেই (প্রথম ওভারে) হাসান আলির বলে মুশফিক বোল্ড হয়ে যাওয়ার পর সে শঙ্কা আরও ঘনিভূত হয়। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ইয়াসির আলী রাব্বি এবং লিটন দাস। কিন্তু ইয়াসির আলী ৩৬ রান করার পর মাথায় আঘাত লেগে মাঠ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর বড় স্কোর গড়ার আশা শেষ হয়ে যায়।
এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ মাঠে নেমে বেশিদুর যেতে পারেননি। তিনি আউট হন ১১ রান করে। কনকাসন সাব হিসেবে মাঠে নামা নুরুল হাসান সোহানও খুব বেশিদুর যেতে পারেননি। আউট হয়ে যান মাত্র ১৫ রান করে। সবার এমন আসা-যাওয়ার ভিড়ে পাকিস্তানি বোলারদের তুমুল চাপের মুখে দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি করেন লিটন দাস। প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসেও করলেন হাফ সেঞ্চুরি।
চাপের মুখে লিটন স্বচ্ছন্দে খেলে গেলেও সেই চাপ সামলাতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান। ৩৩ বল মোকাবেলা করে ১৫ রান করে বিদায় নিলেন তিনি। সাজিদ খানের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে ফাহিম আশরাফের হাতে ক্যাচ দেন সোহান।
এর আগে রিভিউ নিয়ে নিজের আউট ঠেকাতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। সাজিদ খানের বলে বেঁচে গিয়েছিলেন লিটন দাস। আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউতে সেটা বাতিল হয়ে যায়। সাজিদ খানের বলে আবারও এলবিডব্লিউর আবেদন। আম্পায়ার আঙ্গুল তুললেন। রিভিউ আবেদন করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু এবার আর রক্ষা হলো না। দেখা গেলো স্ট্যাম্প বরাবরই বল থাকছে। এলবিডব্লিউ হয়ে আউট হয়ে গেলেন মিরাজ।
ইয়াসির আলি রাব্বি মাথায় আঘাত পাওয়ার পর মাঠে নেমে লিটন দাসের সঙ্গে ভালো একটা জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু ৪৪ বল মোকাবেলা করে ১১ রানে আউট হয়ে গেলেন তিনি। মিরাজের পর ইয়াসির আলি রাব্বির কনকাশন হওয়া তথা পরিবর্তিত ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান নামলেন মাঠে।
৪৫তম ওভারের খেলা শেষ হওয়ার পর অবশ্য লাঞ্চ বিরতিতে চলে যায় দুই দল। প্রথম সেশনে ২ উইকেট হারালেও বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে যোগ করেছে ৭৪ রান। পাকিস্তানের সামনে টাইগারদের লিড দাঁড়িয়েছে ১৫৯ রানের।
এর আগে দিনের শুরুর তৃতীয় বলেই পাকিস্তানি পেসার হাসান আলির হাতে বোল্ড হয়ে গেলেন উইকেটে থাকা মুশফিকুর রহিম। দুটি লুজ বল দেয়ার পর তৃতীয় বলটি পারফেক্ট কর্কার ছিল হাসান আলির। মুশফিক ভেবেছিলেন অফ স্ট্যাম্প মিস করে যাবে বলটি। এ কারণে তিনি ব্যাট দিয়ে বল না ঠেকিয়ে ছেড়ে দেন; কিন্তু না, অফস্ট্যাম্পকে উড়িয়ে নিয়েই চলে গেলো বল।
স্রেফ বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। অফ স্ট্যাম্পের ওপর থাকা বলটাকেই সঠিকভাবে বিচার করতে পারলেন না মুশফিক। দিনের প্রথম বলে একটি বাউন্ডারি মেরে যেন আত্মবিশ্বাসটা আকাশে উড়তে চাইছিল তার। সেটাই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়ালো। হাসান আলির ট্রিকসটাই বুঝতে পারলেন না তিনি। ৩৩ বল মোকাবেলায় ১৬ রান করে আউট হলেন তিনি।
মুশফিক আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন লিটন দাস। জুটি বাধেন ইয়াসির আলি রাব্বির সঙ্গে। ৪৭ রানের জুটি গড়েন দু’জন মিলে। এ সময়ই ঘটে দুর্ঘটনা। হেলমেটে বলের আঘাত লাগে রাব্বির। যার প্রভাব পড়েছে তার মাথায়ও।
ম্যাচের ৩০তম ওভারের পঞ্চম বলটিই মাথায় লাগে রাব্বির। বলটি শট লেন্থে করেছিলেন পাকিস্তানি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। প্রচণ্ড গতির বলটিকে ডাক করে মাথার ওপর দিয়ে চলে যেতে দিয়েছিলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। কিন্তু বল এতটা উপরে উঠলো না। ফলে সেটি গিয়ে আঘাত হানে রাব্বির হেলমেটে, বাম চোখের কোনের কাছে।
সঙ্গে সঙ্গে দলীয় চিকিৎসক এসে রাব্বিকে শুশ্রুষা দেয়ার চেষ্টা করেন। এরপর শাহিনের ওভারের শেষ বলটিও মোকাবেলা করেন রাব্বি। পরের ওভারটি করতে আসেন পাকিস্তান স্পিনার নৌমান আলি।
তার পুরো ওভারটাও খেলেন ইয়াসির আলি। কিন্তু মাথার যন্ত্রণায় আর টিকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত মাঠের বাইরেই চলে যেতে বাধ্য হন তিনি। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে গেলেন তিনি ৩৬ রানে। যদিও শেষের দিকে মাঠে নামার সুযোগ ছিল তার। কিন্তু তার ব্যাপারে আর ঝুঁকি নিতে রাজি নয় টিম ম্যানেজমেন্ট। যে কারণে কনকাশন সাব হিসেবে নেয়া হয় সোহানকে।
নদী বন্দর / সিএফ