কলকাতার লাজেপাড়া এলাকার একটি বাণিজ্যিক ভবনের আট তলায় দলীয় অফিস খুলেছে আওয়ামী লীগ। এটি সাধারণ বাণিজ্যিক অফিসের মতো দেখালেও, এখানে দলের নেতাকর্মীরা নিয়মিত বৈঠক করেন। তবে এই অফিসের বাইরে বা ভেতরে দলীয় কোনো সাইনবোর্ড বা নেতাদের ছবি নেই। এটা সচেতনভাবে এমন রাখা হয়েছে যেন কাউকে সন্দেহ না হয়।
গত বছরের আগস্টের পর থেকে ভারতে পালিয়ে আসা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা শুরুতে নিজেদের বাসায় ছোট ছোট বৈঠক করতেন। বড় বৈঠকের জন্য রেস্তোরাঁ বা ব্যাঙ্কোয়েট হল ভাড়া করতে হতো। তাই একটি স্থায়ী অফিসের প্রয়োজন দেখা দেয়। অবশেষে এই বাণিজ্যিক ভবনের একটি অফিস নিয়ে সেখানে দলীয় কাজ চালাচ্ছেন তারা।
এই অফিসে ৩০ থেকে ৩৫ জন পর্যন্ত বৈঠক করা যায়। তবে ছোট বৈঠক অনেক ক্ষেত্রেই নেতাদের বাসায়ই হয়। বড় সভার জন্য এখনো ব্যাঙ্কোয়েট হল ভাড়া করতে হয়।
কলকাতায় অবস্থান করছেন অনেক বাংলাদেশি আওয়ামী লীগ নেতা ও সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা। তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য, জেলা সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান, মন্ত্রী প্রমুখ রয়েছেন। কেউ কেউ সপরিবারে আছেন, কেউ একসঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। পরিবার আসা-যাওয়া করেন। ভারতে থাকা নেতাদের সংখ্যা বাড়ছে না অনেক। তবে প্রায় দুই শতাধিক শীর্ষ নেতা ও কর্মী কলকাতা ও আশপাশে রয়েছেন।
দলের ‘পার্টি অফিসে’ যাতায়াতের নির্দিষ্ট সময় নেই। প্রয়োজন মতো নেতারা আসেন। এখানে দলের নিয়মিত কাজকর্ম, আলোচনা হয়। সাধারণ মানুষের চোখে তারা একদম অজানা। ভারতীয় গোয়েন্দা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া এই অফিস থেকে দল পরিচালনা সম্ভব নয়।
গত এক বছরে ভারতে থেকেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা দিল্লি সংলগ্ন এলাকায় থাকেন। কলকাতায় অবস্থানরত নেতারা নিয়মিত ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। এই বছর জুলাইয়ে দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের একটি বৈঠক হয়, যেখানে দলের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়।
ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়। তরুণ প্রজন্মের মাঝে ভার্চুয়াল আলোচনা বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তবে ভারতে অবস্থানরত নেতাদের বিরুদ্ধে সামাজিকমাধ্যমে প্রশ্ন ওঠে, যখন দেশে কর্মীরা দমন-নির্যাতনের মুখে পড়ছেন, তখন তারা কেন বিদেশে আছেন। সাবেক সংসদ সদস্যরা বলছেন, বাস্তবে ভারতে থেকে দলের কার্যক্রম চালানো এক ধরনের রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও শক্তি সঞ্চয়ের প্রয়াস। অনেক দেশের রাজনৈতিক দলই এমন ব্যবস্থা নিয়েছে।
একই সঙ্গে দলীয় সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ সভাপতি সাদ্দাম হুসেইনও ভারতে রয়েছেন। তিনি বলছেন, দেশে ছাত্রলীগ কর্মীরা নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনেকেই পরীক্ষা দিতে পারেননি, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
দলের খরচ চালানোর জন্য অর্থ সাহায্য করছেন দেশ-বিদেশের শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ভারতের নেতারা নিজ জীবনযাত্রা অনেকটাই পরিবর্তন করেছেন। ঢাকায় যাদের বিলাসিতার জীবন ছিল, তারা এখন গণপরিবহনে চলাচল করেন। একই ফ্ল্যাটে একাধিক নেতা থাকেন এবং মিলেমিশে খরচ ভাগাভাগি করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের জানিয়েছেন, রাজনৈতিক লড়াইয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে চলা সম্ভব নয়। তবে লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।
সূত্র: বিবিসি
নদীবন্দর/ইপিটি