মুনি-ঋষির মতো চালচলন তার। কথা-বার্তা বলেন খুব কম। সফলতা-ব্যর্থতায়ও থাকেন নিশ্চুত। নিপাট ভদ্রলোক যাকে বলে আর কী! কেন উইলিয়ামসন যেন ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
তবে মাঠে এই শান্তশিষ্ট স্বভাবের মানুষের মাথা চলে ঠিক কম্পিউটারের মতো। সঠিক ফিল্ডিং সেটআপ, বোলার পরিবর্তনে দূরদর্শিতা বরাবরই দেখিয়ে আসছেন উইলিয়ামসন। সবচেয়ে বড় কথা তার নেতৃত্বগুণ এক সুতোয় বেঁধেছে পুরো নিউজিল্যান্ড দলকে।
একটা দল হিসেবে অনেকদিন ধরেই ক্রিকেট বিশ্বে দাপট দেখাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। যার কৃতিত্ব অনেকাংশে উইলিয়ামসনের। ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড হেরেছিল ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বে। এরপর এই দায়িত্ব নিয়ে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট থেকে সরে আসেননি উইলিয়ামসন। উল্টো ম্যাককালামের পথ ধরেই ব্ল্যাকক্যাপসের একের পর এক টুর্নামেন্টে সাফল্য এনে দিচ্ছেন তিনি।
আড়াই বছর আগে উইলিয়ামসনের নেতৃত্বে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে নিউজিল্যান্ড। ভাগ্য সহায় থাকবে সেবার হয়তো শিরোপা উঠত উইলিয়ামসনের হাতেই। তবে তা হয়নি। বিশ্বকাপ হারানোর দুঃখ এ বছর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ভুলেছে নিউজিল্যান্ড।
তবে বিশ্বকাপ তো বিশ্বকাপই। এবার তাই ট্রফিটা ঘরে তুলতে চায় নিউজিল্যান্ড। সে জন্য কেন উইলিয়ামসনকে আজ মাথাটা খাটাতে হবে নিজের মতো করে।
আজ উইলিয়ামসনকে অবশ্য টক্কর দিতে হবে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কের সঙ্গে। যার সঙ্গে বেশ ভালো একটা মিল আছে তার।
এখন পর্যন্ত, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে জাতীয় দলকে সমান ৫৫টি ম্যাচ নেতৃত্ব দিয়েছেন উইলিয়ামসন-ফিঞ্চ দুজনেই। আশ্চর্য করা বিষয়, দুজনের জয়ের সংখ্যাও সমান ২৮, হারের সংখ্যাও সমান ২৫ (ফিঞ্চের নেতৃত্বে খেলা অস্ট্রেলিয়ার বাকি দুই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। উইলিয়ামসনের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডের একটি ম্যাচ টাই হয়, আরেকটিতে আসেনি কোনো ফল)।
অস্ট্রেলিয়াকে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া ফিঞ্চের চালচলনও অনেকটা উইলিয়ামসনের মতো। কথা-বার্তা বোধহয় একটু কম বলতেই পছন্দ করেন। তবে মাঠের মধ্যে দলকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন, অনুপ্রেরণা জোগাতে পারেন বেশ।
অথচ ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে যাত্রা শুরু ফিঞ্চের। তবে দলকে সামলানোর গুন থাকায় একটা সময় তার ওপরই আস্থা রাখে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
ফিঞ্চের নেতৃত্বে এই প্রথম কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলবে অস্ট্রেলিয়া। এর আগে ফিঞ্চের অধিনায়কত্বে অস্ট্রেলিয়ার সেরা সাফল্য ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা। সেবার সেমিতে ইংল্যান্ডের কাছে রীতিমতো উড়ে গিয়েছিল অজিরা।
এবারের বিশ্বকাপেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের কাছে পাত্তা পায়নি ফিঞ্চবাহিনী। তবে এরপর থেকেই ঘুরে দাঁড়ানো শুরুর দলটির। বিশ্বকাপের আগের বাজে ফর্ম এবং ইংল্যান্ডের কাছে ওই হার বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে ভুলেছে অস্ট্রেলিয়া। যার অনেকটা কৃতিত্ব ফিঞ্চকে দিতেই হয়। মানসিকভাবে পুরো দলকে চাঙ্গা রেখেছিলেন তো তিনিই।
বলাই বাহুল্য, আজ শিরোপার জন্য লড়াই শুধু নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার দলগত হবে না। সামনে থেকে মূল কলকাঠি নাড়া এ দুজনের মাথায় খেলাও তাতে ভূমিকা রাখবে বেশ।
নদী বন্দর / বিএফ