চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার বড় পার্থক্য ছিল টপঅর্ডার ব্যাটিং। সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের দুই ওপেনার ম্যাচের দুই ইনিংসে করেছেন ৩৪৯ রান। যেখানে বাংলাদেশের প্রথম চার ব্যাটার মিলে করতে পেরেছেন মাত্র ৬৭ রান।
তাই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টপঅর্ডারে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা ছিল যথেষ্ঠই। ঢাকা টেস্টের স্কোয়াডে দেখা যাবে পরীক্ষিত কোনো ওপেনার বা টপঅর্ডার ব্যাটারকে- এমনটাই ছিল সবার আশা। এমনকি অধিনায়ক মুমিনুল হকও ম্যাচ শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অভিজ্ঞতার দিকে ঝোঁকার কথাই বলেছিলেন।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টের জন্য ঘোষিত স্কোয়াডে প্রথমবারের মতো নেওয়া হয়েছে বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটার মোহাম্মদ নাইম শেখকে। পাশাপাশি দলে ফেরানো হয়েছে ফিটনেস টেস্টে পাস করা সাকিব আল হাসান ও তাসকিন আহমেদকে।
ওপেনারদের ব্যর্থতায় সবার প্রত্যাশা যেখানে ছিল সদ্য সমাপ্ত জাতীয় লিগে ভালো করা কোনো ব্যাটারকে দলে দেখার অথবা অভিজ্ঞদের মধ্যে কাউকে দলে ফিরতে দেখার, সেখানে টেস্ট দলে চমক হিসেবেই ডাক পেয়েছেন নাইম। যিনি গত বছর দুয়েক ধরে শুধু সীমিত ওভারের ক্রিকেটই খেলছেন।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নাইমের সবশেষ ম্যাচ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সেই ম্যাচের দুই ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হন তিনি। সবমিলিয়ে নাইমের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার মাত্র ছয় ম্যাচের। যেখানে ১১ বার ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ১৬ গড়ে ১৮৩ রান করতে পেরেছেন এ বাঁহাতি ওপেনার।
তবু অন্য সবাইকে রেখে নাইমকেই কেন টেস্ট দলে নেওয়া? স্কোয়াড ঘোষণার বিবৃতিতে এ প্রশ্নের আনুষ্ঠানিক উত্তর দেননি জাতীয় দলের নির্বাচকরা। অগত্যা যোগাযোগ করা হয়নি প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর সঙ্গে।
নাইমের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বোঝাতে চেষ্টা করেন, নাইম লম্বাসময় ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেললেও, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত আছেন। নিয়মিত খেলছেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। তাই আন্তর্জাতিক মানের বোলারদের মোকাবিলা করা সহজ হবে তার জন্য।
প্রধান নির্বাচকের কথায় আরও একবার উঠে আসে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানের পার্থক্যটা। জাতীয় দলের সঙ্গে থাকার সুবাদে আন্তর্জাতিক মানের অনুশীলন সুবিধা পান নাইম। নেটে বোলিং মেশিনের মাধ্যমে ১৪০-১৪৫ গতির বোলিংয়ের বিরুদ্ধে অনুশীলনও করা হয় তার।
কিন্তু জাতীয় লিগ খেলা ক্রিকেটারদের সেই সুবিধা নেই। এছাড়া বেশিরভাগ ম্যাচই খেলা হয় স্পিন সহায়ক উইকেটে। যেখানে গতিময় পেসারদের চেয়ে স্পিন পরীক্ষাই বেশি দিতে হয় ব্যাটারদের। তাই জাতীয় লিগে ভালো করা ব্যাটারদের দিকে নজর থাকলেও, এখনই তাদেরকে শাহিন আফ্রিদি, হাসান আলিদের পেসের সামনে ফেলতে রাজি নয় নির্বাচক প্যানেল।
মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেছেন, ‘আমরাও জানি নাইম লঙ্গার ভার্শন কম খেলে। কিন্তু আমরা একটা জিনিস বুঝতে পারছি, আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ফারাক অনেক। দীর্ঘদিন ধরে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে নাইম। সে জাতীয় দলের সঙ্গে নিয়মিতই আছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘শুধু সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেললেও, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনুশীলন নিয়মিতই করে। অনুশীলনে নিয়মিতই বোলিং মেশিনে উচ্চগতির বিপক্ষে খেলছে, ঘরোয়া ক্রিকেটে এই সুবিধাটা নেই। তাই জাতীয় লিগের কোনো ব্যাটারকে হুট করেই শাহিন আফ্রিদি-হাসান আলিদের বিপক্ষে নামিয়ে দেওয়া সমীচীন মনে করিনি আমরা।’