বর্তমান সময়ে দীর্ঘদিন জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে আবদ্ধ থাকায় প্রায়ই মানসিক অবসাদের কথা শোনা যায় ক্রিকেটারদের কাছ থেকে। করোনাভাইরাসের সতর্কতার কারণে গতবছর জুন থেকে জৈব সুরক্ষা বলয় বানিয়েই চালানো হচ্ছে সবধরনের ক্রিকেট।
যার ফলে মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ক্রিকেটারদের। এ বিষয়ে বর্তমান ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণা দিতে কথা বলেছেন খেলাটির ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান শচিন টেন্ডুলকার। যিনি দীর্ঘ ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে দেখেছেন অনেক উত্থান-পতন।
ক্যারিয়ার শেষে ওয়ানডে ও টেস্ট ফরম্যাটের সর্বোচ্চ রানের মালিক হয়েই আছেন টেন্ডুলকার। দুই ফরম্যাট মিলে করেছেন সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি অর্থাৎ একশটি শতরান। তার নামের পাশে রয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার আন্তর্জাতিক রান। কিন্তু এ যাত্রাটা মোটেও মসৃণ ছিল না।
টেন্ডুলকার জানালেন, অন্তত ১০-১২ ধরে মানসিক লড়াই লড়তে হয়েছে তাকে, কাটিয়েছেন অসংখ্য নির্ঘুম রাত। একপর্যায়ে বুঝতে পেরেছেন, খেলাটিতে টিকে থাকতে শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিও বড় একটি বিষয়।
ভারতের একটি শিক্ষামূলক অনলাইন প্ল্যাটফর্মের আয়োজনে অংশ নিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের এই দিকটি সম্পর্কে কথা বলেছেন টেন্ডুলকার। তার ভাষ্য, ‘সময়ের সঙ্গে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম, খেলার জন্য শারীরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতিও গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি মাঠে প্রবেশ করার অনেক আগেই আমার ভাবনায় খেলা শুরু হয়ে যেত। উদ্বেগের পর্যায়টা ছিল অনেক বেশি। ১০-১২ বছর ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে আমাকে এবং ম্যাচের আগে অসংখ্য রাত আমার নির্ঘুম কেটেছে। পরে মানিয়ে নিতে শুরু করি এভাবে যে, এটাও আমার প্রস্তুতির অংশ। এরপর রাতে ঘুম না হলেও স্বাভাবিক থেকেছি।’
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন টেন্ডুলকার, ‘মনকে প্রফুল্ল রাখতে কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চেয়েছি। ব্যাটিংয়ের মতো ভঙ্গি করতাম, টিভি দেখতাম, ভিডিও গেম খেলতাম। এমনকি চা বানানো, নিজের কাপড় ইস্ত্রি করা, এসবও আমাকে সাহায্য করেছে ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হতে। ম্যাচের আগের দিনই পরিপাটি করে ব্যাগ গুছিয়ে নিতাম, আমার বড় ভাই আমাকে এসব শিখিয়েছিলেন। ভারতের হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলার আগেও এই রুটিন অনুসরণ করেছি।’
এসময় তিনি জানান, যেকোনো ইনজুরিকে যেমন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় ক্রিকেটে, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়কেও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কেননা খেলাটির জন্য উভয় দিকই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
টেন্ডুলকার বলেছেন, ‘যখন কেউ চোট পায়, ফিজিও-ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখেন যে কোথায় সমস্যা। মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারটিও একইরকম। সবাইকেই ভালো-খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যখন খুবই দুঃসময় আসে, তখনই কাছের মানুষদের পাশে প্রয়োজন হয়। এখানে মানিয়ে নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ওই ক্রিকেটার নয়, তার আশপাশের মানুষদেরও এটা বুঝতে হবে। সবাই যখন এটা মেনে নেবে, তখন সমাধানও বের হতে থাকবে।’
নদী বন্দর / এমকে