1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
ঢাকাই সিনেমায় সুপারহিট যেসব নায়ক-ভিলেন জুটি - Nadibandar.com
শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ অপরাহ্ন
নদী বন্দর ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ১৫৭ বার পঠিত

চলচ্চিত্রে জুটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সাধারণত পর্দার সামনে নায়ক-নায়িকা জুটি নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়। নায়ক-নায়িকা জুটির বাস্তব প্রেম-বিয়ের গুঞ্জন সবসময়ই বাড়তি বিনোদন দিয়েছে সিনেমা ভক্ত-দর্শকদের। এরপরই আলোচনায় আসে নায়ক কিংবা নায়িকার সঙ্গে নির্মাতার জুটি। বলিউডে শাহরুখ খানের সঙ্গে যশ চোপড়া ও করণ জোহরের জুটি বেশ জনপ্রিয়।

বাংলাদেশেও নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন ও নায়ক রুবেল, কাজী হায়াত-মান্না, মনতাজুর রহমান আকবর-মান্না, মোহাম্মদ হান্নান-রিয়াজ, বদিউল আলম খোকন-শাকিব খান জুটি সফল উদাহরণ।

পাশাপাশি ষাট বছরের চলচ্চিত্রের ইতিহাস থেকে খুব সহজেই লক্ষ করা যায় আরও একটি জুটির সাফল্য। সেটি হলো নায়ক-ভিলেন জুটি। একসময় গোলাম মোস্তফা, খলিল উল্লাহ খান, এটিএম শামসুজ্জামানরাই ভিলেন হিসেবে চলচ্চিত্র মাতিয়েছেন। সেইসময় তাদের সঙ্গে নায়ক হিসেবে দেখা যেত রাজ্জাক, ফারুক, আলমগীর, উজ্জ্বলদের। তবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক নায়কের ছবিতেই বিশেষ ক’জন ভিলেনকে দেখা যেত নিয়মিতই।

নায়ক-নায়িকা জুটির মতোই সিনেমার দর্শক উপভোগ করেছেন সেসব নায়ক-ভিলেন জুটিগুলোও। তারা উপহার দিয়েছেন ব্যবসা সফল একাধিক সিনেমাও। সেসব নায়ক-ভিলেনদের নিয়ে এই আয়োজন-

জসিম-আহমেদ শরীফ
জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ ছবির মধ্যে যেমন প্রথম অ্যাকশন দৃশ্যর প্রচলন শুরু হয় ঠিক তেমনি ‘খলনায়ক বা ভিলেন’ চরিত্রটিও প্রথম পর্দায় দর্শকরা দেখতে পায়। যেখানে ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা জসিম। সেই সূত্রে জসিম হলেন বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের প্রথম ‘খলনায়ক’। কিন্তু এই খলনায়কই একটা সময় নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং তুমুল জনপ্রিয়তা পান। নায়িকা শাবানা ও রোজিনার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সুপারহিট সিনেমা তিনি উপহার দিয়েছেন।

নায়ক হওয়া জসিমের সিনেমাগুলো দেখলেই অনুমান করা যায় পর্দায় নায়ক জসিমের সঙ্গে ভিলেন হিসেবে জুটি গড়ে ওঠেছিল আহমেদ শরীফের। সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হলেও এই অভিনেতা ভিলেন হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বহু ছবিতে জসিম-আহমেদ শরীফের ভালো-মন্দের কেমিস্ট্রি দর্শক মাতিয়েছে।

জসিম-জাম্বু
নায়ক জসিমের সিনেমা মানেই অ্যাকশান-মারপিটের দৃশ্যের ছড়াছড়ি। বাংলা সিনেমায় স্টাইলিশ মারপিট দৃশ্য জসিমই উপহার দিয়েছিলেন। তার ছবিগুলোতে দেখা যেত নানা কিসিমের মন্দ চরিত্রের ভিলেন। তবে জসিমের ছবিতে কমন ছিল বিশাল দেহী অভিনেতা জাম্বুর উপস্থিতি। দেহের বিশাল আকৃতি, টাক মাথা, ভয়ঙ্কর চোখ, ভারী কণ্ঠের জাম্বুর ভয় দেখিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের মায়েরা তাদের সন্তানদের ঘুম পাড়াতেন- এমন গল্পও শুনতে পাওয়া যায়।

আর হাতের পাঁচ আঙুল ছড়িয়ে দিয়ে জাম্বুর মুখে, টাকা মাথায় থাপ্পড় দেয়া জসিমের সিনেমার জনপ্রিয় দৃশ্য ছিল। জসিম-জাম্বুর সিনেমাগুলো ছিল ব্যবসা সফল।

ইলিয়াস কাঞ্চন-এটিএম শামসুজ্জামান
গ্রামীন, মধ্যবিত্তের সিনেমার গল্পে জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলা যুবকের চরিত্রে জনপ্রিয় ছিলেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। একজন ডাইনামিক, স্টাইলিশ, জাত অভিনেতা তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য নায়িকাদের নায়ক হয়েছেন তিনি। তেমনি তার সঙ্গে দেখা গেছে সময়ের সেরা সব খল অভিনেতাদেরও। গোলাম মুস্তাফা, খলিল, আহমেদ শরীফ, মিজু আহমেদ, সাদেক বাচ্চু, হুমায়ূন ফরীদি, ড্যানি সিডাক, ইলিয়াস কোবরা থেকে শুরু করে আরও অনেক ভিলেনদেরই কাঞ্চন শায়েস্তা করেছেন সিনেমাতে।

তবে এটিএম শামসুজ্জামানের কূট চালের শিকার কাঞ্চনের সিনেমাগুলো দর্শককে আন্দোলিত করতো। প্রবীন এই খল অভিনেতার সঙ্গে দারুণ জমজমাট ছিল নায়ক কাঞ্চনের সিনেমাগুলো, যা আজও সেসব যুগের ভক্তদের নস্টালজিয়ায় নিয়ে যায়।

সালমান শাহ-রাজিব
দুজনের প্রজন্মের অনেক দূরত্ব। তবুও সন্তানসম সালমান শাহের ছবিগুলোতে নিয়মিত ছিলেন বাংলা সিনেমার শক্তিশালী অভিনেতা ওয়াসিমুল বারী রাজিব। কখনো বাবা হয়ে, কখনো প্রেমিকার বাবা হয়ে, কখনো বা কোনো সম্পর্কের বাইরে থেকেই সালমান শাহের সিনেমায় হাজির হতেন রাজিব। দর্শকও উপভোগ করেছেন এই জুটির সিনেমাগুলো।

যেমন আলোচিত ছিল সালমানের অভিষিক্ত হওয়া ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, তেমনি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘দেনমোহর’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্র। তবে সালমান শাহের অনেক সিনেমাতে হুমায়ূন ফরীদির উপস্থিতিও ছিলো বেশ চমকপ্রদ।

সালমান শাহ-ডন
সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিটি দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সালমান শাহ ও মৌসুমির। তাদের সঙ্গে অভিষিক্ত হয়েছিলেন আরও একজন। তিনি ডন। চলচ্চিত্রে সালমান শাহ যতদিন নায়ক হিসেবে বাজিমাত করেছেন ততদিন খল অভিনেতা হিসেবে তার ছবিগুলোতে দর্শক মাতিয়েছিলেন ডন। প্রায় সব ছবিতেই সালমানের সঙ্গে দেখা যেত ডনের বিরোধ, মারামারি। তুমুল জনপ্রিয় ছিলো সালমান-ডন জুটি। সালমানের অকাল মৃত্যুর পর ডন নিজেকে গুটিয়ে নেন। প্রথমত, ডন নিজের জীবনের সেরা বন্ধু মনে করতেন সালমানকে।

প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু তাকে আহত করেছিল। দ্বিতীয়ত, সালমানের রহস্যজনক মৃত্যুতে হত্যা মামলা করেছিল তার পরিবার। সেই মামলায় একজন আসামি ছিলেন ডন। তার ভাষ্য, ‘সালমানের মৃত্যুর পর আসলে আমি সে রকম ভাবে কারো সাথে মিলিয়ে কাজ করতে পারছিলাম না। তাই সরে আসলাম। বলা যায় সালমানের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ডনেরও মৃত্যু হয়েছে।’

রুবেল-হুমায়ূন ফরীদি
ঢাকাই সিনেমায় জসিমের পর অ্যাকশানে নতুন মাত্রা নিয়ে আসেন চিত্রনায়ক রুবেল। মার্শাল আর্টে পারদর্শি এই নায়ক নান্দনিক সব কৌশলে মারপিটের দৃশ্য দিয়ে জয় করে নিয়েছিলেন নব্বই দশকের তরুণ দর্শকের মন। তাকে ভালোবেসে ভক্তরা ডাকতেন ঢাকাই সিনেমার ব্রুসলি। রুবেল তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহু ভিলেনদের সঙ্গেই অভিনয় করেছেন। তবে হুমায়ূন ফরীদির সঙ্গে তার জমজমাট একটি জুটি গড়ে ওঠেছিল রুপালি পর্দায়। আর তাদের সেই জুটিকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন শহীদুল ইসলাম খোকন। তখন টিভি নাটক ‘সংশপ্তক’-এ কান কাটা রমজান চরিত্র দিয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পান হুমায়ূন ফরীদি।

সেই জনপ্রিয়তাকে বড় পর্দায় ছড়িয়ে দিতে ফরীদিকে ‘সন্ত্রাস’ সিনেমাতে নিয়ে আসেন শহীদুল ইসলাম খোকন। ক্যারিয়ারের প্রথম ছবিতেই তিনি মুখোমুখি হন নায়ক রুবেলের। সেই থেকে শুরু। এরপর প্রায় পঞ্চাশটি চলচ্চিত্রে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গেছে রুবেল-ফরীদিকে। ‘বিশ্ব প্রেমিক’ সিনেমাটি ছিল এই জুটির ভিন্ন মাত্রার বিনোদনের একটি ছবি। যেখানে রুবেল ও ফরীদির সঙ্গে ছিলেন নায়িকা মৌসুমী।

রুবেল-ইলিয়াস কোবরা
মার্শাল আর্ট দিয়ে চলচ্চিত্রে নাম, যশ, খ্যাতি- সবই পেয়েছেন চিত্রনায়ক রুবেল। তার সিনেমাগুলোতে খুব কমন ব্যাপার ছিল অস্ত্রবিহীন মারপিটের দৃশ্য। যেখানে দেখা মিলতো কেবল হাত ও পায়ের নানা কৌশলের। সেই কৌশল রুবেল সবচেয়ে বেশি ফুটিয়ে তুলতে পারতেন একজন ভিলেনের সঙ্গেই। তিনি হলেন ইলিয়াস কোবরা। রুবেলের সিনেমা হলে আসলেই দর্শকের মনের পর্দায় ভেসে উঠতো যে নাম তিনিই হলেন ইলিয়াস কোবরা। বলা যেতে পারে ইলিয়াস কোবরাকে আলাদা করে দর্শকের নজরে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন রুবেল।

আবার নায়ক রুবেলের মার্শাল আর্টকে সিনেমায় জনপ্রিয়তা পেতে সাহায্য করেছিলেন ভিলেন ইলিয়াস কোবরা। কারণ, রুবেলের মতো কোবরাও ছিলেন মার্শাল আর্টে পারদর্শি। তাই রুবেলের আঘাতগুলো সঠিকভাবেই তিনিই মোকাবেলা করতে পারতেন। কোবারাই একমাত্র ভিলেন ছিলেন যিনি রুবেলের মার্শালের কৌশলকে পরাস্ত করে তাকে আঘাতও করতে পারতেন। নব্বই দশকের সিনেমাগুলোতে সেই প্রমাণ রয়ে গেছে। বলা অপেক্ষা রাখে না, রুবেল-কোবরার সিনেমাগুলো ছিল সুপারহিট।

মান্না-ডিপজল
ঢাকাই সিনেমায় সংগ্রাম করে প্রতিষ্ঠা পাবার গল্প বলতে গেলে সবার আগে চলে আসবে যে নামটি, তিনি হলেন নায়ক মান্না। ফারুক-ইলিয়াস কাঞ্চনদের সোনালি যুগ সেই আশির দশকের মাঝামাঝিতে এফডিসিরি নতুন মুখ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন মান্না। কিন্তু মান্না এককভাবে নায়ক হিসেবে আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছিলেন নব্বই দশকের শেষদিকে।

যার শুরুটা বলা চলে ‘শাস্ত কেন মাস্তান’ ছবির মধ্য দিয়ে। আর তার একক আধিপত্যের পেছনে যুক্ত ছিলো আরও একটি নাম। তিনি হলেন ডিপজল। যিনি ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চরিত্রের ভিলেন হিসেবে জনপ্রিয়।

মান্নার সঙ্গে এই অভিনেতার জুটির জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ ছোঁয়া। একটা সময় রুবেল-ফরীদির মতো শুধুমাত্র মান্না-ডিপজলের কেমিস্ট্রি দেখতেই দর্শক হলে যেতেন। সেখানে নায়িকা ছিলেন গৌণ। ‘আম্মাজান’, ‘বর্তমান’, ‘কষ্ট’, ‘গুণ্ডা নাম্বার ওয়ান’ ইত্যাদি সিনেমাগুলো সেই প্রমাণই দেয়। এই জুটির পর ঢাকাই সিনেমাতে এত সফল নায়ক-ভিলেন জুটি আর দেখা যায়নি।

প্রসঙ্গত, ডিপজলও মান্নার মতোই চলচ্চিত্রে অভিষিক্ত হওয়ার অনেক পরে জনপ্রিয়তা পান। তিনি ‘টাকার পাহাড়’ নামের একটি ছবিতে ১৯৯৩ সালে সর্বপ্রথম অভিনয় করেন। কিন্তু ডিপজলের জনপ্রিয়তা আসে ১৯৯৯ সালের দিকে।

শাকিব-মিশা
যদি বলা হয় কোনো একজন নায়ক ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশিবার একজন ভিলেনের সঙ্গে অভিনয় করেছেন? নাম আসতে পারে শাকিব খানের। আবার একইভাবে একজন ভিলেন হিসেবে একজন নায়কের সঙ্গে সর্বাধিক সিনেমা করার রেকর্ডটি হয়তো থাকবে মিশা সওদাগরের নামে। প্রায় দশ বছর ধরেই ঢাকাই সিনেমার একক আধিপত্য নিয়ে সিনেমা করে চলেছেন শাকিব খান। আর তার প্রায় নব্বই ভাগ সিনেমাতেই ভিলেন হিসেবে কাজ করেছেন মিশা সওদাগর। তুলনামূলক ব্যবসায়িক সাফল্য না পেলেও দুই বছর আগেও শাকিব খানের বিপরীতে নির্মাতাদের সেরা পছন্দ ছিলেন মিশা সওদাগর।

হঠাৎ করে শাকিব খান কলকাতামুখী হওয়ায় এবং সিনেমাপাড়ায় নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের জের ধরে শাকিব-মিশার সম্পর্কে ভাটা পড়েছে। দূরত্ব বেড়েছে তাদের ব্যক্তি সম্পর্কে। ফাটল ধরেছে তাদের সিনেমা জুটিতেও। তবে গেল দশ বছরে এটা ছিল নিয়মিত ব্যাপার- শাকিব খানের সিনেমা মানেই ভিলেন মিশা সওদাগর। এই জুটির পর এখন পর্যন্ত আর কোনো নায়ক-ভিলেন জুটি গড়ে উঠতে পারেনি। আগামী দুই-এক বছরে সেই সম্ভাবনাও নেই।

নদী বন্দর / জিকে

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com